প্রাচীন ভারতীয় সূর্যবংশীয় রাজাদের কাহিনি নিয়ে রামায়ণ রচিত। এর রচয়িতা মহর্ষি বাল্মীকি। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি মহাকাব্য। অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্রের জীবন-কাহিনি এর মুখ্য বিষয়। এতে রামের কাহিনি থাকায় এর নাম হয়েছে রামায়ণ। বিষ্ণুর দশাবতারের একটি হচ্ছে রাম। তাই হিন্দুধর্মে রামের কাহিনি নির্ভর ‘রামায়ণ' পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মর্যাদা পেয়ে থাকে। সমগ্র রামায়ণকে সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ভাগকে কাণ্ড বলা হয়। কাণ্ডগুলো হলো : (১) আদি (২) অযোধ্যা (৩) অরণ্য (৪) কিষ্কিন্ধ্যা (৫) সুন্দর (৬) যুদ্ধ এবং (৭) উত্তর কাণ্ড। রামায়ণে চব্বিশ হাজার শ্লোক রয়েছে ।
অযোধ্যার রাজা ছিলেন দশরথ। তাঁর চার পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠপুত্র রামচন্দ্রের জীবন-কাহিনি এ গ্রন্থের মুখ্য বিষয়। রাজা দশরথের তিন স্ত্রী—কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কৌশল্যার পুত্র রাম, কৈকেয়ীর পুত্র ভরত, সুমিত্রার পুত্র লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন। রাজা দশরথ জ্যেষ্ঠপুত্র রামচন্দ্রকে যুবরাজ হিসেবে অভিষিক্ত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু দাসী মন্থরার কুপরামর্শে প্ররোচিত হয়ে কৈকেয়ী দশরথের কাছে দুটি বর চান। কারণ দশরথ কৈকেয়ীর কাছে পূর্বে বর দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই রামের যুবরাজ হিসেবে অভিষেক হওয়ার কথা শুনে কৈকেয়ী দুটি বর দশরথের কাছে প্রার্থনা করেন। প্রথম বর হলো রামের চৌদ্দ বছর বনবাস আর দ্বিতীয়টি হলো ভরতের রাজ্যাভিষেক। রাম পিতৃসত্য পালনের জন্য বনে চলে গেলেন। রামের শোকে দশরথ মারা গেলেন। বনবাস সময়ে লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে অপহরণ করেন। বানর সেনাদের নিয়ে রাম লঙ্কা আক্রমণ করেন।
রাবণকে পরাজিত করে রাম সীতাকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফিরিয়ে আনলেন। সীতা দীর্ঘ দিন লঙ্কায় বন্দী থাকায় অনেক প্রজা অযোধ্যার রানী হিসেবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। অবশেষে প্রজাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য রামচন্দ্র সীতাকে পুণরায় বনবাসে পাঠালেন। সেখানে বাল্মীকি মুনির আশ্রমে সীতা আশ্রয় পেলেন। বনবাসে যাওয়ার সময় সীতা সন্তান-সম্ভবা ছিলেন। আশ্রমে যাওয়ার পর সীতা লব ও কুশ নামে দুটি যমজ সন্তান জন্ম দিলেন। বারো বছর পর বনবাস শেষে সীতা লব ও কুশকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন।
এখানে রামায়ণের কাহিনিটি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। বিষ্ণুর অবতার হিসেবে রামের অসংখ্য গুণাবলি তার বিভিন্ন কার্যাবলির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে আমরা রামকে একজন পিতৃভক্ত সন্তান, প্রজাবৎসল রাজা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সফল বীর, ন্যায় এবং সত্যের প্রতীক হিসেবে দেখতে পাই। আমরা নিশ্চয়ই রামের এই গুণাবলি অর্জন করে আমাদের জীবনে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করব।
আরও দেখুন...